লাইফস্প্রিং এর সেক্সুয়াল মেডিসিন ইউনিটে পুরুষ এবং নারী রোগীদের এপয়েন্টমেন্ট কল আসা মাত্রই রোগীদেরকে ২ ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়। আমরা চেষ্টা করি পুরুষ রোগীকে পুরুষ ডাক্তারের অধীনে এবং নারী রোগীদেরকে নারী ডাক্তারের অধীনে রেফার করতে। এর বাইরে, ট্রান্সজেন্ডার রোগীরা কন্সালট্যান্ট বেছে নেয়ার সুযোগ পান। এরই সূত্র ধরে গত কয়েক বছরে আমার সহস্রাধিক ফিমেইল পেশেন্ট ডিল করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। নারীদের সমস্যা আমি শুনি, অনেকে স্বামীর সমস্যার জন্যেও আমার সাথে কন্সাল্ট করতে আসেন। কিছু কেস থাকে পিওরলি সেক্সুয়াল, কিছু কেইস জেনিটাল ইনফেকশন সংশ্লিষ্ট। তা থেকেই আমি আমাদের পরিবার এবং সমাজের একটা পিকচার পাই। আমাকে ইদানীং অল্প বয়সী অবিবাহিত, বিয়ের আগে সেক্সে বিশ্বাসী তরুণীদের অবস্থা খুব চিন্তায় ফেলছে(পুরুষদের ব্যাপারে আমার মেইল কলিগরা ভাল বলতে পারবেন)। ১৫-২৭ বছরের মেয়েদের মাঝে অস্বাভাবিক হারে মাল্টিপল সেক্সুয়াল পার্টনার রাখার প্রবণতা বাড়ছে। এক সময় সব পার্টনার রাখছেন তারা এমন না।সহজ হিসেবে সব বয়ফ্রেন্ডের সাথেই সেক্স হচ্ছে। ইমার্জেন্সি পিল এর যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। তার হাত ধরে Ectopic Pregnancy এবং একটার পর একটা এবরশন। আমাদের সেক্সুয়াল মেডিসিন ইউনিটের গাইনোকলজিস্ট এই কেসগুলো সামলান। আমি পাই রাজ্যের Sexually Transmitted Infection। বিশেষ করে Genital Herpes, Genital Wart, Gonorrhoea, Hepatitis. আমি এধরনের রোগীদেরকে ডিটেইল এক্সামিনেশন করি। Genital Herpes এর ফোস্কা সহ একটা বীভৎস vulva-vagina আর সারা জীবনের ভোগান্তি নিজ চোখে দেখালে হয়তো মেয়েরা নিজের সেইফটি নিয়ে ১০ বার চিন্তা করতো! আফসোস যে সেটা তো সম্ভব না! ‘সেক্স এডুকেশন’ এ কিভাবে সেক্স করতে হয় কখনো শিখানো হয়না কিন্তু Sexually Transmitted Infection নিয়ে বিস্তারিত শেখানো হয়। আমাদের দেশে যেহেতু সেক্স এডুকেশন নাই তাই ইয়াং জেনারেশন সেক্স শিখেছে ঠিক ই, Safe Sex শিখে নাই। এটা গেল ইনফেকশন নিয়ে আমার কন্সার্ণ। আমাদের দেশে সেক্সুয়াল হেলথ যে কি পরিমাণ স্টিগমাটাইজড একটা জায়গা নিজে কাজ না করলে কখনো বুঝতাম না। টেলিমেডিসিন সেবা নেয়ার ব্যাপারটাকে আমার মতে সহজ করেছে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু মজার ব্যাপার টেলিমেডিসিন এও সেক্সুয়াল ইস্যুতে সাফার করা মানুষ অডিও কল বেছে নন, ভিডিও কল এড়িয়ে যান পাছে আমি চেহারা দেখে ফেলি! আমার প্রচন্ড কষ্ট লাগে মানুষগুলোর জন্যে। আমাদের দেশের শত শত মেয়ে স্বামীর অপারগতায় অনেক কষ্ট থাকেন। নিজেদের চাহিদার কথা বলতে গেলে বাজে কথা শোনেন – “না পোষালে অন্য কারো কাছে যা”! মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ইন্টিম্যাসি নাই এরকম সংসার আছে শত শত! কোন কোন পরিবারে স্বামী স্ত্রীর মানসিক দূরত্ব আকাশ পাতাল তাও খেলাঘর টা নামে মাত্র টিকে আছে। বহু নারী যৌন অনাগ্রহে ভোগেন বিয়ের অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই।মেয়েরা ইন্টিম্যাসিতে যেতে চান না এর বড় কারনের একটা ইন্টিম্যাসিতে নারীদের স্যাটিসফ্যাকশন এর হার কম। স্বামীরা সেক্সুয়াল প্রব্লেমে ভুগলেও ডাক্তার দেখানোটাকে ইগোর ব্যাপার মনে করেন। হস্তমৈথুন, পরকীয়া, পর্ণোগ্রাফি আস্তে আস্তে তার জায়গা করে নেয়। স্বামী-স্ত্রী যার যার মত এডজাস্ট করে নেয়। কিন্তু মাঝখানে একটা হাহাকার লুকিয়ে থাকে যাকে দেখা যায় না, ধরা যায় না। আরেক অংশের নারী ইন্টিম্যাসিতে ভয় পান। মাস গড়ায় বছর গড়ায় এরা ইন্টিম্যাসিতে যান না। আমি ২০ বছর বিয়ে হয়েছে সেক্স হয়নি এমন ফিমেইল কেইস ডিল করেছি!অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি! আমার ধারণা আগামী ২০ বছরেও এই ফিল্ডে এতো কাজ তা করে শেষ করা সম্ভব না। আমাদের জনবল অনেক বাড়াতে হবে। যারা সরকারী বড় বড় পদে আছে নীতি নির্ধারণীতে সেক্স এডুকেশন কে আনা যায় কীনা দেখবেন। বেসরকারীভাবে আমাদের জন্যে অনেক কিছুই করা কঠিন। আমি সব সময় বলি, সেক্স কোন হাসির ব্যাপার না।অত্যন্ত সিরিয়াস এবং সেন্সিটিভ একটা ব্যাপার। সব সময় দোয়া করবেন যাতে নিজে কখনো এ ধরনের কোন সমস্যায় না পড়েন।
Leave a Reply