লেখকঃ প্রভাষক আমিনুর রহমান শামীম (শিক্ষক নেতা ও কলামিস্ট):সরকার বাহাদুর শ্রমিকদের দাবী দাওয়া মেনে নেন কারণ তারা কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদ করে রাস্তায় নেমে এলে সমস্ত দেশ অচল হয়ে পড়ে। সরকার বাহাদুর ডাক্তার বাবুদের দাবি মেনে নেন কারণ তারা দায়িত্ব থেকে বিরত থেকে প্রতিবাদ করলে দেশের চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ে! কিন্তু শিক্ষকদের ন্যায্য দাবী দাবিদাওয়া, আন্দোলন সংগ্রাম কোনটাই সরকার আমলে নেন না, নেবেন না; কারণ বেসরকারি শিক্ষকদের পেশাটাকে স্বাধীনতার পরবর্তী সকল সরকারগুলোই তৃতীয় লিঙ্গের পেশা হিসেবে মনে করেছেন!
সরকারগুলো যদি মনেই না করতেন শিক্ষা দিয়ে রাতারাতি দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় তাহলে শিক্ষকদের সামান্য ঈদ বোনাসের দাবি টুকু বিবেচনা করতে পারলেন না কেন? শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকার শুধু নয় ছয় ষোল এবং বাস্তবে পনের এর নীতিমালা দিয়েই ক্ষান্ত হয় নি বরং দেশের এতবড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষাতের পরিচালিকা শক্তি শিক্ষকদের ন্যুনতম মূল্যায়নটুকুও করে নি, করছে না বা করবে না। উন্নয়নশীল থেকে উন্নত রাষ্ট্র হতে যেখানে শিক্ষার ভূমিকা নেই সেখানে মূল্যায়ন হবেই বা কেন?
এর কারণ হিসেবে শিক্ষক নেতারা মনে করেন প্রতিমাসে স্বাস্থ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, বানিজ্য, খাদ্য, সড়ক ও জনপদ, এলজিইডির মত আউটপুট তথা ব্যবসা, চাঁদা, বিটমানি, সিন্ডিকেট, ডোনেশন, ইত্যাদি ইত্যাদি এই শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে পাওয়া যায় না।
আবার একথাও উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই যে, যারা মনে প্রাণে এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব জাতীয়পতাকার বিরোধিতা করেছেন, আবার যারা শত্রু রাষ্ট্রের উপর প্রতিশোধ নিতে শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু বানিয়েছেন তারা কেউই চান না মেধাবী বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। আর এই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতাকে সহ আমাদের মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের হারাতে হয়েছে। আজও সেই আন্তজার্তিক কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ শিক্ষকগণ যদি তাদের যুগোপযোগী ও চাহিদা মোতাবেক রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে স্বচ্ছলতা লাভ করেন, শিক্ষকগণ যদি সন্তান ও পরিবারের জন্য মোটা কাপড়, মোটা চাল আর ঔষধের কথা চিন্তা করে মাথা নিচু করেই না থাকেন তবে যে এ দেশে এই শিক্ষকগণই বিশ্বের সেরা ডাক্তার, বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার, প্রথিতযশা শিক্ষক, খ্যাতিমান লেখক, দূরদর্শী গবেষক, বিশ্বখ্যাত আইনজীবী, অবিসংবাদিত রাজনীতিবিদ সৃষ্টি করবেন। তাই এই আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের মেধা শূন্য বাংলাদেশ গড়ার ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারকে এখনই অধিক গুরুত্বের সাথে কঠোর হওয়া উচিত ।
বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশেই সরকারের শিক্ষকদের আন্দোলন, সংগ্রাম, দাবীদাওয়ার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এই দেশেই শিক্ষকগণ সোনার মানুষ গড়ে তোলেন। স্বাধীনতার পূর্বাপরে এ দেশের সবচাইতে অবহেলিত, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত ও মেরুদণ্ড ভাংগা একটা পেশা হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষকতা! জোয়ার ভাটার দেশের মানুষ শুধু মুখেই বলি ” শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। ” শিক্ষরা মানুষ গড়ার কারিগর ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো এখন পাবলিকের কাছে এনালগ কথাবার্তা! শিক্ষকগণ মানুষ গড়ার জন্য পাঠদান করেন! আর আমাদের জনসাধারণ, অভিভাবক ও সরকার বাহাদুর এতটাই ডিজিটাললের আশীর্বাদ তুষ্ট হয়ে পড়েছেন যে গুগল, ক্রোম, ইউটিউব চ্যানেল বা অনলাইনেই এখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ফেলা যায়! তআহলে সরকার শিক্ষক আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব দেবেনই বা কেন?
আপসোসের বিষয় হচ্ছে,আমাদের শিক্ষকদের ব্যর্থতাও কম নয়। শিক্ষক হচ্ছেন শান্তশিষ্ট, ভদ্র, লক্ষী, শান্ত এক শ্রেনীর মানুষ। এরা স্মারকলিপি প্রদান করতে পারেন কিন্তু রাজপথে নামতে জানেন না। এরা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসে সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু জেলা বা উপজেলা শহরে এসে আলোচনা করতে পারেন না। তাদের ব্যক্তি চিন্তা ব্যতীত জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় ভাবনায় এদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার বৃথা চেষ্টাটুকুও করা সম্ভব নয়! আর একারণেই স্মারকলিপি সরকার প্রধান পড়েন না! আপসোস!বেসরকারি শিক্ষকদের শতভাগ ঈদ বোনাস নিয়ে এত আলোচনা, সমালোচনা, জল্পনা কল্পনা, শিক্ষকদের টকশো, শিক্ষকদের টিভি চ্যানেলে কত মতবিনিময়, সোস্যাল মিডিয়ায় শিক্ষকদের অনুভূতি ও মতামত প্রকাশের ন্যুনতম মূল্যায়নটুকু করলো না সরকার?
জাতির সন্মানিত শিক্ষকরা যখন শতভাগ ঈদ বোনাস পাচ্ছেনই না তখন সকলকে সোসাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় তোলা উচিত। যে যেভাবে পারেন লিখুন। লিখতে না চাইলে কমেন্টস করুন। কমেন্টস করতে না চাইলে শেয়ার করুন। যদি তাও না পারেন রিয়্যাক্ট করুন! আমরা শিক্ষকরা উচ্চশিক্ষিত হয়েও সবচাইতে আত্মকেন্দ্রিক ও অলস। আমাদের চোখ থাকতেও অন্ধ! মুখ থাকতেও বোবা। হাত থাকতেও অকর্মা!
যতদিন দেশের সকল শিক্ষক এক সিদ্ধান্তে, এক প্লাটফর্মে এসে যোগ্য প্রতিনিধি তৈরি না করবে, যতদিন সকল শিক্ষক একসাথে কর্মবিরতির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানে তালা মেরে রাজপথে এসে দাঁড়াতে না পারবেন, যতদিন বেসরকারি শিক্ষকগণ সকল পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শক, পরীক্ষক, নিরীক্ষক, জাতীয় নির্বাচন সহ সকল নির্বাচন বর্জন না করবেন, যতদিন শিক্ষক বান্ধব ও দেশপ্রেমিক প্রতিষ্ঠান প্রধানগণরা এগিয়ে না আসবেন ততদিন কোন সরকারই শিক্ষকদের কোন ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিততো করবেনই না বরং প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বেসরকারি শিক্ষক ও শিক্ষকদের চাঁদার টাকায় প্রতি মাসে দু তিনটি করে দিবস পালন করে সবাইকে খুশি রাখতে পারবেন।
Leave a Reply