লেখকঃ প্রভাষক আমিনুর রহমান শামীম, কলামিস্ট ও কোভিড-১৯ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সমাজ সেবক: বিশ্ব মহামারী কোভিড-১৯ এর সাথে অবিরাম লড়াই করেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি। গত ২০২০ সালের এই মার্চ মাসে সম্পূর্ণ নতুন এবং জীবন ধ্বংসকারী ভাইরাস কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমাদের সরকার যদি তখন সমগ্র দেশ লকডাউন করে না দিতেন; নতুন অভিজ্ঞতায় আমাদেরকে আরো অনেক মূল্য দিতে হতো। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। ইতিমধ্যে উন্নত দেশগুলোর সাথে সাথে সরকার আমাদের বাংলাদেশকেও ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় নিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে অনেকেই টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন, কেউ নিবন্ধন করেছেন, কেউ নিচ্ছেন। টিকা বা ভ্যাক্সিন গ্রহণের ব্যাপারে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী,চাকুরীজীবি এবং শহরের জনগণ যেমন সচেতন ছিলেন বা আছেন তেমনিভাবে গ্রামগঞ্জের মানুষদের মধ্যে দেখা যায় নি। নিবন্ধন প্রক্রিয়াতো দূরের কথা তাদের অনেকেই অদ্যাবধি মাস্ক ব্যবহার করেন নাই। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শহর থেকে মানুষকে গ্রামে যেতে দেয়া হয় নি বা যে যার যার স্থানে অবস্থান করায় গ্রামের মানুষ গুলো কোভিড আক্রান্ত হয়নি বললেই চলে। তাই তাদের মধ্যে সচেতনতা বোধও অনেক কম। শহরের সমস্ত অফিস আদালত, হাসপাতাল, মার্কেট,রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, মন্দির,গীর্জা, বিনোদন কেন্দ্র, হাট বাজার সহ যে সকল স্থানে জনসমাগম বেশি হয় সেসব স্থান গুলোতে এখনই কঠোর ও গুরুত্বের সাথে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এ ব্যাপারে শুধু সরকারই নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গুলোকে দেশপ্রেমের দায়ে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করেও বাংলার মানুষ কোভিডের সাথে লড়াই করেছে। সবার একটা ধারণা ছিলো শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে। কিন্তু না, গরম কালে আবার বৃদ্ধি পেলো! করোনা আমাদের রক্তে মাংসে স্বাভাবিক হয়ে আসছিলো, আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছিলাম। আবার সেই মার্চের মাঝামাঝি সময়েই বেড়ে গেলো করোনার দ্বিতীয় ছোবল। আমরা হারাতে শুরু করলাম আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে! করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় আমরা আগের মত আর মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস তথা পিপিই পড়ি না। বাসায় ঢোকার আগে হাতের কনুই দিয়ে কলিংবেল চাপি না, আগের মত ৩০ সেকেন্ড ধরে তিন-চার বার সাবান পানি, হ্যান্ড র্যাব বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া সবাই ভুলে গেছি। বাহির থেকে এসে শার্ট-প্যান্ট, পোষাক, বাজার, স্যান্ডেল, জুতা অন্তত ৬ ঘন্টা আলাদা রাখতাম, এখন আর রাখি না! বাসার মেঝে বা ফ্লোর আর জীবানু নাশক দিয়ে মুছি না! রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বাজার, গণপরিবহন কোথাও কি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছি? আসল কথা কোথাও স্বাস্থ্য বিধির কোন বালাই নেই। করোনা মোকাবেলায় শুধু ভ্যাক্সিন নয় জনগণের সচেতনতা বাড়াতে সরকারকে এখনই জনবল বাড়িয়ে হলেও ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে মন্ত্রী পরিষদ থেকে সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে । আমাদের মধ্যে যদি করোনা ভীতি থেকে থাকে, মৃত্যু ঝুঁকি থেকেই থাকে তাহলে কেন সরকারকে প্রশাসন দ্বারা জোর করে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাতে হবে? আসলে আমরা বড় স্বাস্থ্য অবহেলার এক জাতি! যতক্ষণ রোগ শেষ পর্যায়ে না পৌঁছে ততক্ষণ আমরা ডাক্তারের কাছে যাই না! আমরা এত অভাগা জাতি যে, স্বজনদের মৃত্যু সংবাদে ছুটে যাই, এত জানাজা নামাজ পড়ি, দাফন বা দাহ করি তারপরও মৃত্যুকে বিশ্বাস করতে পারি নাই! তাই এখনই প্রশাসনকে নড়েচড়ে বসতে হবে। সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করলে জনস্বার্থে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি।
Leave a Reply