1. Aktarbd2@ichamotinews.com : ichamotinews : ichamotinews
  2. zakirhosan68@gmail.com : zakir hosan : zakir hosan
আজ রুপসী বাংলার কবির জন্ম দিন - ইছামতী নিউজ
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন

আজ রুপসী বাংলার কবির জন্ম দিন

Reporter Name
  • Update Time : Wednesday, 17 February, 2021
  • ৩৭৯ Time View

আজ রুপসী বাংলার কবির জন্ম দিন

আজ রুপসী বাংলার কিংবদন্তি কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মদিন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন এই খ্যাতিমান কবি। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার আদি নিবাসী। তাঁর পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত বিক্রমপুর থেকে বরিশালে নিবাস স্থানান্তরিত করেন।

সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন। তিনি বরিশালে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁর মানবহিতৈষী কাজের জন্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন। জীবনানন্দের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত সর্বানন্দের দ্বিতীয় পুত্র।

সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, বরিশাল ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক এবং ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক।

জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন গৃহস্থ, কিন্তু তিনি কবিতা লিখতেন। তাঁর সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) আজও শিশুশ্রেণীর পাঠ্য। জীবনানন্দ ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান; তার ডাকনাম ছিল মিলু।

জন্মসূত্রে তাঁর পদবী “দাশগুপ্ত” হলেও তিরিশের দশকের শুরুতে জীবনানন্দ “গুপ্ত” বর্জন করে কেবল দাশ লেখা শুরু করেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে আট বছরের মিলুকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েই তাঁর বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় রচনার সূচনা হয়। এছাড়া সে সময় তাঁর ছবি আঁকার দিকেও ঝোঁক ছিল।

১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকিউলেশন (বর্তমানে মাধ্যমিক বা এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দু’বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় পূর্বের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটান; অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার উদ্দেশ্যে বরিশাল ত্যাগ করেন।

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজীতে অনার্স সহ বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। অতঃপর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি আইন পড়া শুরু করেন, কিন্তু অচিরেই তা পরিত্যাগ করেন।

কলকাতা জীবন: প্রথম পর্ব সম্পাদনা
জীবনানন্দ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি এ কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি.এ. পাশ করেন।

সাহিত্যচর্চা ও জীবনসংগ্রাম: তরুণ জীবনানন্দ দাশ
যৌবনের প্রারম্ভেই জীবনানন্দের কবিপ্রতিভা বিকশিত হতে শুরু করে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৫ এর জুনে মৃত্যুবরণ করলে জীবনানন্দ তাঁর স্মরণে ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ নামক একটি ব্রাহ্মবাদী কবিতা রচনা করেন, যা বঙ্গবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

কবিতাটি পরবর্তীতে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ঝরা পালকে স্থান করে নেয়। কবিতাটি পড়ে কবি কালিদাস রায় মন্তব্য করেছিলেন, “এ ব্রাহ্মবাদী কবিতাটি নিশ্চয়ই কোন প্রতিষ্ঠিত কবির ছদ্মনামে রচনা”।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দেই তাঁর প্রথম প্রবন্ধ স্বর্গীয় কালীমোহন দাশের শ্রাদ্ধবাসরে প্রবন্ধটি ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার পরপর তিনটি সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

ঐ বছরেই কল্লোল পত্রিকায় ‘নীলিমা’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে তা অনেক তরুণ কাব্যরসিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ধীরে ধীরে কলকাতা, ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গার বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকায় তাঁর লেখা ছাপা হতে থাকে; যেগুলির মধ্যে ছিল সে সময়কার সুবিখ্যাত পত্রিকা কল্লোল, কালি ও কলম, প্রগতি প্রভৃতি।

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক প্রকাশিত হয়। সে সময় থেকেই তিনি তাঁর পারিবারিক উপাধি ‘দাশগুপ্তের’ বদলে কেবল ‘দাশ’ লিখতে শুরু করেন।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের কয়েক মাসের মাথাতেই তিনি সিটি কলেজে তাঁর চাকরিটি হারান। ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে কলেজটিতে ছাত্র অসন্তোষ দেখা দেয়, ফলাফলস্বরূপ কলেজটির ছাত্রভর্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।

কলকাতায় করবার মতো কোন কাজ ছিল না বলে কবি ছোট্ট শহর বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তবে মাত্র দুই মাস কুড়ি দিন পরেই তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় তিনি প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংয়ে থাকতেন।

চাকুরি না থাকায় এ সময় তিনি চরম আর্থিক দুর্দশায় পড়ে গিয়েছিলেন। জীবনধারণের জন্যে তিনি গৃহশিক্ষকরূপেও করতেন, এবং লেখালিখি থেকে সামান্য কিছু রোজগার হতো। সাথে সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরির সন্ধান করছিলেন।

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে তিনি দিল্লির রামযশ কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এখানেও তাঁর চাকুরীর মেয়াদ মাত্র চার মাস।

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৯ই মে তারিখে তিনি লাবণ্য দেবীর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। এসময় তাঁর পিতা জীবিত এবং জীবনান্দের স্ত্রী বরিশালেই ছিলেন বলে জীবনানন্দের বেকারত্ব পারিবারিক দুরবস্থার কারণ হয়নি।

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কবির প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রীর জন্ম হয়। প্রায় সে সময়েই তাঁর ক্যাম্পে কবিতাটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সাথে সাথে তা কলকাতার সাহিত্যসমাজে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়।

কবিতাটির আপাত বিষয়বস্তু ছিল জোছনা রাতে হরিণ শিকার। অনেকেই এই কবিতাটি পাঠ করে তা অশ্লীল হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তিনি তাঁর বেকারত্ব, সংগ্রাম ও হতাশার এই সময়কালে বেশ কিছু ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছিলেন;- তবে তাঁর জীবদ্দশায় সেগুলো প্রকাশ করেননি।

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি একগুচ্ছ গীতিকবিতা রচনা করেন যা পরবর্তী কালে তাঁর রূপসী বাংলা কাব্যের প্রধান অংশ নির্মাণ করে। এ কবিতাগুলিও জীবনানন্দ প্রকাশ করেননি।

১৯৫৪-তে তাঁর মৃত্যুর পর কবিতাগুলো একত্র করে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন তাঁর বোন সুচরিতা দাশ এবং ময়ুখ পত্রিকা খ্যাত কবি ভূমেন্দ্র গুহ।

বরিশালে প্রত্যাবর্তন: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে জীবনানন্দ তাঁর পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজে ফিরে যান, যা তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। তিনি সেখানকার ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

সে সময়ে কলকাতায় বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সমর সেন একটি আনকোড়া নতুন কবিতাপত্রিকা বের করার তোড়জোড় করছিলেন, যার নাম দেয়া হয় কবিতা।

পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাতেই জীবনানন্দের একটি কবিতা স্থান করে নেয়, যার নাম ছিল ‘মৃত্যুর আগে’। কবিতাটি পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেবকে লেখা একটি চিঠিতে কবিতাটিকে ‘চিত্ররূপময়’ বলে মন্তব্য করেন।

কবিতা পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাতে (পৌষ ১৩৪২ সংখ্যা; ডিসে ১৯৩৪/জানু ১৯৩৫) তাঁর কিংবদন্তিসম বনলতা সেন কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এই ১৮ লাইনের কবিতাটি বর্তমানে বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার অন্যতম হিসেবে বিবেচিত।

পরের বছর জীবনানন্দের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধূসর পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হয়। জীবনানন্দ এর মধ্যেই বরিশালে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলেন। ১৯৩৬ এর নভেম্বরে তাঁর পুত্র সমরানন্দের জন্ম হয়।

১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতা সংকলন সম্পাদনা করেন, যার নাম ছিল বাংলা কাব্য পরিচয় এবং এতে জীবনানন্দের মৃত্যুর আগে কবিতাটি স্থান পায়।

১৯৩৯ সালে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয় আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হিরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়; এতে জীবনানন্দের চারটি কবিতা – পাখিরা, শকুন, বনলতা সেন এবং নগ্ন নির্জন হাত অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৪৪ সালে তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ মহাপৃথিবী প্রকাশিত হয়। এর আগের তিনটি কাব্যগ্রন্থ তাঁকে নিজের পয়সায় প্রকাশ করতে হয়েছিল, তবে মহাপৃথিবীর জন্যে তিনি প্রকাশক পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে প্রকাশিত এই কবিতাগুচ্ছে যুদ্ধের ছাপ স্পষ্ট।

চাকরির প্রয়োজনে বরিশালে প্রত্যাবর্তন করলেও কলকাতা জীবনানন্দকে খুব টানতো। কলকাতার সুবিস্তৃত পরিসর তিনি উপভোগ করতেন। তিনি সর্বদাই কলকাতায় অভিবাসনের কথা ভাবতেন। সুযোগ পেলেই স্টিমারে বরিশাল থেকে খুলনা তারপর ট্রেনে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় পাড়ি জমাতেন।

১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের কিছু পূর্বে সপরিবারে বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেন এবং কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্ তিনি আরো দু’টি উপন্যাস লিখেছিলেন – ”মাল্যবান” ও ”সুতীর্থ”, তবে আগেরগুলোর মতো এ দুটিও অপ্রকাশিত রেখেছেন।

মৃত্যুর কিছু পূর্বে হাওড়া গার্লস কলেজ-এ অধ্যাপনার চাকুরি জুটে গেলে তাঁর কলকাতা জীবনের অপরিসীম দৈন্যদশার সুরাহা হয়। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

আজ এই রুপসী বাংলার কবির জন্ম দিবস, আজকের এইদিনে কিংবদন্তি এই কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

প্রভাষক আমিনুর রহমান শামীম (শিক্ষক নেতা, লেখক ও কলামিস্টঃ)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *