1. Aktarbd2@ichamotinews.com : ichamotinews : ichamotinews
  2. zakirhosan68@gmail.com : zakir hosan : zakir hosan
স্মার্টফোনের জন্য গরু বিক্রি করতে হবে কেন? - ইছামতী নিউজ
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন

স্মার্টফোনের জন্য গরু বিক্রি করতে হবে কেন?

Reporter Name
  • Update Time : Sunday, 2 August, 2020
  • ২৬৪ Time View

বাবা-মায়েরা পড়েছেন ভীষণ বিপদে। স্কুল বন্ধ, কিন্তু সন্তানদের পড়াশোনা তো চালাতে হবে। তাই করোনাকালে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে স্মার্টফোন। কারণ, লকডাউনে স্কুলের পড়াশোনা সবই তো অনলাইনে হচ্ছে। তাই স্মার্টফোন না থাকলে বন্ধ রাখতে হবে পড়াশোনা। অগত্যা একটি গরু বেচে দিলেন ছয় হাজার ভারতীয় টাকায়। গরু যাক, অন্তত দুই সন্তানের পড়াশোনাটা চলুক। এই মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে ভারতের হিমাচল প্রদেশে। কিন্তু আদৌ কি এর দরকার আছে?

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক শিক্ষার একটি মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ। আমি আমার লেখা ‘পাঠক্রমে সৃজনশীল কাজ’ বইয়ে প্রাথমিক স্কুলের শ্রেণিকক্ষে করা যায়—এমন কিছু কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেছি। আজকের লেখায় আমি চেষ্টা করব কীভাবে বাড়িতেও এসব কর্মসূচি পালন করে শিশুর মেধাবিকাশ অব্যাহত রাখা যায়। বাবা-মায়েদের আমি দুভাগে ভাগ করব—এক. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত মা-বাবা; ও দুই. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত মা-বাবা। এক এক করে আলোচনা করা যাক।

দিনপঞ্জি
আমাদের প্রায় সবার বাড়িতেই দিনপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার আছে। বাবা-মায়েরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এটা নিয়ে বসতে পারেন। ছুটির দিনগুলো নিয়ে কথা আলোচনা করতে পারেন। ছুটির দিনগুলোর মধ্যে আছে ধর্মীয় উৎসব, যেমন ঈদ, পূজা, বড়দিন, বুদ্ধপূর্ণিমা ইত্যাদি। এগুলো ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি তারা ছাত্রছাত্রীদের ঈদকার্ড, পূজা, বড়দিন ও বুদ্ধপূর্ণিমার কার্ড বানাতে বলতে ও সাহায্য করতে পারেন। ধর্মীয় উৎসবগুলো এমনভাবে আলোচনা করতে হবে, যাতে ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ ধর্মের মূল্যবোধ, ন্যায়নিষ্ঠার প্রতি আকৃষ্ট করার পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতা জন্মায়।

তারপর রইল জাতীয় ও সামাজিক উৎসব, যেমন স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলা, ইংরেজি, ও আরবি নববর্ষ। বাবা-মায়েরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এসব দিবসের পটভূমি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, কার্ড বানাতে পারেন। তারপর দিনপঞ্জিতে পারিবারিক বিশেষ দিনগুলো চিহ্নিত করতে পারেন, যেমন ছাত্রছাত্রীদের জন্মদিন, বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী, স্বজনদের জন্ম-মৃত্যু দিবস ইত্যাদি। পারিবারিক অ্যালবাম হাতে মা-বাবা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বসতে পারেন। তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের জীবনের উল্লেখযোগ্য ও মজার ঘটনা উল্লেখ করতে পারেন। বাসায় সাদা বোর্ড থাকলে পারিবারিক শাখা-প্রশাখা (ফ্যামিলি ট্রি) এঁকে দেখাতে পারেন। এতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে।

সব শেষে রইল মনীষী, যেমন নেলসন ম্যান্ডেলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও জাতীয় নেতাদের, যেমন শেরেবাংলা, মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ, জিয়াউর রহমান প্রমুখের জন্ম ও মৃত্যুদিবস। এসব আলোচনা হবে সবার প্রতি সম্মানসূচক। খেয়াল রাখতে হবে, মা-বাবার পক্ষপাত বা বিদ্বেষ যাতে শিশুদের মধ্যে সংক্রামিত না হয়।

এসব বিষয় আলোচনার পাশাপাশি দিনপঞ্জির সংখ্যাগুলো নিয়ে অঙ্ক করা যেতে পারে, যেমন ঈদের কত দিন পরে বা আগে বা পরে বাংলা নববর্ষ (যোগ-বিয়োগ), সাতই মার্চকে কত দিয়ে গুণ করলে একুশে ফেব্রুয়ারি পাওয়া যাবে (গুণ-ভাগ) ইত্যাদি। বাংলা, ইংরেজি ভাষাও এসব আলোচনার মাধ্যমে খেলাচ্ছলে শিখিয়ে দেওয়া যাবে। তাহলে ভাষা, অঙ্ক, এভাবে শেখা হয়ে গেল। বাকি থাকল ইতিহাস, ভূগোল ও সমাজবিদ্যা।

বাংলাদেশের মানচিত্র
দিনপঞ্জি ছাড়াও মানচিত্র নিয়ে একই ধরনের সৃজনশীল পাঠ অব্যাহত রাখা যেতে পারে। বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে শুরুতেই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারেন। তারপর রাজধানী ঢাকার ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রাচীন আমল এবং গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। একে একে বিভাগগুলো, এদের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গিয়ে সিলেট বিভাগের হাওর, চা-বাগান, হজরত শাহজালালের মাজার সম্পর্কে আলাপ করতে পারেন। একই আলোচনা হতে পারে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, কুমিল্লার ময়নামতিতে শালবন, বৌদ্ধবিহার, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় নীলগিরি, সেখানকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও তাদের পোশাক, খাবারদাবার, জীবনবৈচিত্র্য বিষয়ে উল্লেখ করতে পারেন। ছাত্রছাত্রীদের মানচিত্রে জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে, আকর্ষণীয় স্থানগুলোর ছবি আঁকতে বলা যেতে পারে। ছবি দেখিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জায়গা চিহ্নিত করতে বলা যেতে পারে। একই আলোচনা হতে পারে বরিশালের খাল-বিল নিয়ে, বাংলাদেশের নদ-নদী, এদের উৎপত্তিস্থল, বঙ্গবন্ধু সেতু, বগুড়ার মহাস্থানগড়, সেখানকার প্রাচীন সভ্যতা ইত্যাদি নিয়ে। এমনই আলোচনা হতে পারে সব বিভাগ, জেলা, এমনকি উপজেলা সম্পর্কে। বিশেষ জোর দিতে হবে নিজের উপজেলা, জেলা ও বিভাগ নিয়ে আলোচনায়। তুলে ধরতে হবে বাংলাদেশের ঋতু, প্রকৃতি, ফুল, ফল, জীবজন্তু ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে। এভাবে খেলাচ্ছলে ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ পাঠদান করা সম্ভব।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত মা-বাবা
এবার বলছি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত বাবা-মায়েরা কী করবেন? যাঁদের ঘরে দিনপঞ্জি বা মানচিত্র নেই বা যাঁরা এগুলোর ব্যবহার জানেন না, তাঁরা কী করবেন? তাঁরা নিজেরা দৈনন্দিন যা যা করেন, তাতেই ছাত্রছাত্রীদের সম্পৃক্ত করবেন। বাবা কৃষিকাজ করলে ছাত্রছাত্রীদের এ কাজে সম্পৃক্ত করবেন। তাঁদের কোন ঋতুতে কোন ফসল হয়, তা দেখাবেন। কখন আগাছা নিড়ানি দিতে হয়, বীজ বুনতে, সেচ, সার দিতে হয়, তা শেখাবেন। ফসলের রোগবালাই থেকে কীভাবে রক্ষা পেতে হয়, তা বলবেন। মাছচাষি হলে কীভাবে মাছের চাষ করতে হয়, খামারে মুরগি পালন করতে হয় তা দেখাবেন। অর্থাৎ যে যে পেশাতেই জড়িত থাকেন না কেন, সেই পেশা সম্পর্কে জ্ঞান দান করবেন। মায়েরা বালক-বালিকানির্বিশেষে সবাইকে ঘরের কাজ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, কাপড় ধোয়া, গরু-হাঁস-মুরগির খাবার দেওয়া, বাজার করা, মাছ-তরকারি কোটা, বাছা, রান্না ইত্যাদি কাজ শেখাবেন। অনেকে বলে থাকেন, পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষা থেকে এসব প্রায়োগিক শিক্ষার মূল্য অনেক বেশি। পুনরায় স্কুল শুরু হলে ছাত্রছাত্রীরা আবার ক্লাসে ফিরে যাবে। তবে এসব শিক্ষা তারা যেখানই থাকুক না কেন কাজে লাগবে। তাদের আর ইউটিউব দেখে রান্না শিখতে হবে না। আমি নিজে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা অন্যান্য উন্নত দেশে উচ্চপদে কর্মরত প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ, ডাক্তারকে নিজের খেতে উৎপাদিত লালশাক, বেগুন, লাউ ইত্যাদি নিয়ে গর্বভরে ফেসবুকে ছবি দিতে দেখেছি। অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীরা যেখানেই থাকুক না কেন, এ শিক্ষা তাদের কাজ লাগবে।

তাই দোহাই লাগে, অনলাইনে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য গরু বিক্রি করে স্মার্টফোন কিনবেন না। এর কোনো প্রয়োজন নেই। ঘরেই, আপনাদের হাতের পাশেই ছাত্রছাত্রীদের ভালোভাবে পড়ানোর ব্যবস্থা আছে।

দিলরুবা কবির: সাবেক পাঠক্রম বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *